একাত্তরের দিনগুলি গল্পের অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর (PDF ১০০% বোর্ড কমন উত্তর উত্তর)

একাত্তরের দিনগুলি গল্পের অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর

একাত্তরের দিনগুলি গল্পের অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর । একাত্তরের দিনগুলি গল্পকে বিশ্লেষণ করলে অনেকগুলো অনুধাবনমূলক প্রশ্ন পাওয়া যায় তার ভিতর বাছাইকৃত ও গুরুত্বপূর্ণ । নবম দশম শ্রেণীর বাংলা প্রথম পত্র একাত্তরের দিনগুলোর গল্পের প্রশ্ন উত্তর নিম্নে দেওয়া হলো

একাত্তরের দিনগুলি গল্পের অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর

প্রশ্ন-১ 'তাহলেই দেখ— ভয়টা আসলে মনে।' — বাক্যটি বুঝিয়ে লেখো।
উত্তর: মুক্তিযুদ্ধের সময় কোনো স্থানই নিরাপদ নয় বলে লেখিকা আলোচ্য উক্তিটি করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় ঢাকায় অনেকে যার যার সুবিধামতো স্থানে আশ্রয় নিতে থাকে। কেউ আশ্রয় নিতে শান্তিনগরে এসেছে আবার শান্তিনগরের মানুষ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাত থেকে বাঁচতে এলিফ্যান্ট রোডে যাচ্ছে। নিজের বাসস্থানটাকে কেউ আর নিরাপদ ভাবতে পারছে না। আসলে যুদ্ধকালীন সময়ে শত্রুরা যেকোনো জায়গায় হানা দিতে পারে। এ কারণে লেখিকা প্রশ্নোক্ত মন্তব্য করেছেন।

প্রশ্ন-২. লেখিকার মন পাষাণভরা কেন? 
উত্তর: পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণের কারণে ঢাকা শহর থমথমে হয়ে যাওয়ায় লেখিকার মনটা পাষাণভরা।। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণে ঢাকা শহরের জীবনযাত্রা স্থবির হয়ে পড়ে। মানুষ বিক্ষিপ্তভাবে নিরাপদ আশ্রয় নিতে থাকে। লেখিকাও আশঙ্কা করছেন তাঁর জীবনেও কি সত্যি সত্যি দুর্যোগ নেমে আসবে কি না, তাই তাঁর মন পাষাণভরা। 

প্রশ্ন-৩ হঠাৎ বাগান করার নেশা লেখিকার কেন মনে পড়েছিল?
উত্তর: মুক্তিযুদ্ধের সময় লেখিকার ভয়ানক বিক্ষিপ্ত মনকে ব্যস্ত রাখার জন্য বাগান করার নেশার কথা মনে পড়েছিল। লেখিকার একটি বাগান ছিল। বেশ কিছুদিন সেখানে নজর দেওয়া হয়নি। মুক্তিযুদ্ধের কারণে লেখিকার মন বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে। বাগান করাটা একটা নেশা। তাই লেখক বিক্ষিপ্ত মনের দুঃখকষ্ট ভুলে থাকার জন্য বাগান করায় মনোযোগ দিয়েছিলেন। 

প্রশ্ন ৪ স্কুল খুললেও জামী স্কুলে যাবে না কেন?  
উত্তর: দেশ জুড়ে অস্থিরতা এবং যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে বলে স্কুল খুললেও জামী স্কুলে যাবে লেখিকার ছোট ছেলে জামী দশম শ্রেণির ছাত্র। ১৯৭১ সালের যুদ্ধাবস্থায় যখন দেশবাসীর ওপর হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর নির্মম নিষ্পেষণের স্টিমরোলার চলছে, তখন সরকার জোর করে স্কুল-কলেজ খোলার ব্যবস্থা করে। দেশের এই সংকটাপন্ন অবস্থায় কোনো মানুষের নিরাপত্তা নেই। বললেই চলে। এমতাবস্থায় কোনো ছাত্রেরই উচিত নয় বই খাতা বগলে নিয়ে স্কুলে যাওয়া। এসব দিক বিবেচনায় স্কুল খুললেও জামী স্কুলে যাবে না। 

প্রশ্ন-৫ লেখিকা 'অবরুদ্ধ নিষ্ক্রিয়তা' বলতে কী বুঝিয়েছেন? 
উত্তর: অবরুদ্ধ নিষ্ক্রিয়তা বলতে লেখিকা যুদ্ধকালীন তাঁর ছোট ছেলের বাস্তব পরিস্থিতিকে বুঝিয়েছেন। লেখিকার ছোট ছেলে জামী। যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে স্কুল খুললেও সে স্কুলে যাবে না বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। সঙ্গত কারণেই তাকে বাসায় একাকী সময় কাটাতে হতো। যুদ্ধকালীন সময়ে ছেলের এরূপ একাকীত্ব বোঝাতে লেখিকা অবরুদ্ধ নিষ্ক্রিয়তা শব্দটি ব্যবহার করেছেন। 

প্রশ্ন-৬ পাকিস্তানি সরকার বুদ্ধিজীবী ও শিল্পীদের ধরে খবরের কাগজে বিবৃতি দেওয়ালেন কেন? 
উত্তর: পাকিস্তানি সরকার রাজনৈতিক কূটকৌশল হিসেবে বুদ্ধিজীবী ও শিল্পীদের ধরে খবরের কাগজে বিবৃতি দেওয়ালেন। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরীহ মানুষের ওপর নির্মম অত্যাচার ও ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালিয়েই ক্ষান্ত হননি। তারা রেডিও-টিভিতে বিখ্যাত ও পদস্থ ব্যক্তিদের ধরে প্রোগ্রাম করিয়েও তেমন সুবিধা করতে পারছিলেন না। তাই অস্ত্রের মুখে বুদ্ধিজীবী ও শিল্পীদের ধরে খবরের কাগজে বিবৃতি দেওয়ার কূটকৌশল শুরু করেছিল। 

প্রশ্ন ৭ রুমীকে কারাগার থেকে বের করে আনতে সকলের মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়েছিল কেন? 
উত্তর: সরকার দেশবাসী ও বিদেশিদের কাছে দেশের পরিস্থিতি উত্তর: রুমীকে কারাগার থেকে বের করে আনতে একেক জনের একেক বিবৃতিপত্রে সই করায়। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনী দেশজুড়ে নারকীয় হত্যাকাণ্ড চালায়। এতে দেশের সাধারণ মানুষ প্রতিবাদী হয়ে উঠে। তাদের থামাতে পাক করায়। কিন্তু এতেও কাজ না হলে বুদ্ধিজীবী ও শিল্পীদের ভয় দেখিয়ে সরকার প্রথমে রেডিও-টিভির কর্মকর্তাদের দিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠান বিবৃতি পত্রে সই করিয়ে সে বিবৃতি প্রকাশ করে। রুমীকে উদ্ধারের জন্য ওর বন্ধু বাঁকা ও ফকির সরকারের কাছে প্রাণভিক্ষা চেয়ে একটা মার্সি পিটিশন দিয়ে তদবির করার মত দিয়েছিল। কিন্তু তাতে রুমীর বাবা শরীফ রাজি হতে পারেনি কারণ এটা রুমী পছন্দ করবে না। মা জাহানারা ইমাম প্রথমে রাজি হলেও পরে স্বামী শরীফের পক্ষেই মত দেন। তাই দ্বিধাদ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়েছিল 

প্রশ্ন-৮ 'মুক্তিফৌজ' কথাটা লেখিকার কাছে ভারী কেন? বুঝিয়ে লেখো। 
উত্তর: দেশমাতৃকাকে বাঁচানোর জন্য মুক্তিফৌজদের কর্মকাণ্ডের দিকটি বিবেচনায় মুক্তিফৌজ কথাটি লেখিকার কাছে ভারী মনে হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনার জন্য নিজের জীবনকে তুচ্ছ করে মুক্তিফৌজরা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। মুক্তিফৌজের গেরিলা তৎপরতায় আশান্বিত হতে ওঠে এদেশের মানুষ। ঢাকা শহরেও মুক্তিফৌজের গেরিলারা ছোট ছোট স্ফুলিঙ্গ জ্বালাতে শুরু করেছে, এ কথা শুনে জাহানারা ইমামের কাছে কেমন অবিশ্বাস্য মনে হয়। আশাবাদী হয়ে ওঠেন তিনি। মূলত দেশ স্বাধীন করার দায় বহনকারী বলেই মুক্তিফৌজ কথাটি লেখিকার কাছে ভারী মনে হয়।

প্রশ্ন-৯ সামরিক জান্তার কাছে মার্সি পিটিশন করলে রুমী বাবা-মাকে ক্ষমা করতে পারবে না কেন? 
উত্তর: মার্সি পিটিশন করলে আত্মমর্যাদাবোধের জায়গাটিতে আঘাত লাগত বলেই রুমী বাবা-মাকে ক্ষমা করতে পারত না। মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের অপরাধে হানাদাররা যেকোনো সময় লেখিকার বড় সন্তান রুমীকে হত্যা করতে পারে। এজন্য রুমীকে বের করে আনবার জন্য একবার সামরিক জান্তার কাছে মার্সি পিটিশন করারও প্রস্তাব আসে। মার্সি পিটিশন হচ্ছে শাস্তি থেকে অব্যাহতির আবেদন। কারণ রুমীর বাবা এ সিদ্ধান্ত মেনে না নেওয়ার জায়গায় অটল থাকেন। কারণ মার্সি পিটিশন করলে রুমীর আদর্শিক চেতনা ক্ষুণ্ন হয়।

 প্রশ্ন ১০  রুমীর আদর্শের অপমান বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
 উত্তর: মুক্তিযোদ্ধা রুমীর প্রাণ বাঁচাতে সামরিক জান্তার কাছে তার বাবা রুমীর প্রাণভিক্ষা করলে রুমীর আদর্শকে অপমান করা হয়। মুক্তিযোদ্ধা রুমী সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে মুক্তিসংগ্রামে যোগ দিয়েছেন। তাঁর উদ্দেশ্য ও আদর্শ দেশ স্বাধীন করা ও দেশকে শত্রুমুক্ত করা। এ দেশের মানুষের সার্বিক মুক্তি অর্জন করা। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, তিনি পাকিস্তানি হানাদারদের হাতে আটক হয়ে পড়েন। বাবা-মা তাঁর প্রাণ নিয়ে শঙ্কিত হয়ে ওঠেন। এমতাবস্থায় অনেকেই সামরিক জান্তার কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন জানিয়ে রুমীর জীবন রক্ষা করতে বলেন। একজন গৌরবদীপ্ত মুক্তিসংগ্রামী রুমীর প্রাণভিক্ষা চাওয়া খুনি সরকারের কাছে তাঁর আদর্শকে ছোট করার নামান্তর। প্রশ্নের উক্তির মাধ্যমে রুমীর আদর্শের অপমান বলতে এ কথাই বোঝানো হয়েছে। 

 প্রশ্ন-১১ রুমীকে অন্যভাবে বের করে আনার চেষ্টা হয়েছিল কেন? 
উত্তর: রুমীর আদর্শকে সমুন্নত রাখতেই মার্সি পিটিশন না করে তাকে অন্যভাবে বের করে আনার চেষ্টা হয়েছিল। শহিদ জননী জাহানারা ইমামের সন্তান রুমীকে পাকিস্তানি সেনারা ধরে নিয়ে গেছে। বাঁকা আর ফকির তাকে ছাড়িয়ে আনার জন্য প্রাণভিক্ষা চেয়ে মার্সি পিটিশন করার কথা বলে। কিন্তু তাতে রুমীর আদর্শকে অপমান করা হবে বলে তার বাবা শরীফ সে প্রস্তাবে সম্মত হন না। তখন রুমীর মা মার্সি পিটিশন না করে অন্যভাবে তাকে বের করে আনার চেষ্টা করা হবে বলে মত দেন। 

প্রশ্ন-১২. স্বাধীন বাংলা বেতারে কারা কাজ করতেন? বুঝিয়ে লেখো। 
উত্তর: স্বাধীন বাংলা বেতারে স্বাধীনতাকামী শিল্পীরা কাজ করতেন। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে হাসান ইমাম বাংলা সংবাদ পাঠ করতেন। ইংরেজি খবর ও ভাষ্য প্রচার করতেন আলী যাকের ও আলমগীর কবির। গায়কদের মধ্যে ছিলেন রথীন্দ্রনাথ রায়, আব্দুল জব্বার, অজিত রায়, ইন্দ্রমোহন রাজবংশী ও হরলাল রায়। কথিকা পড়তেন সৈয়দ আলী আহসান, কামরুল হাসান ও ফয়েজ আহমদ। নাটকে ছিলেন রাজু আহমেদ ও মাধুরী চট্টোপাধ্যায়। 

প্রশ্ন-১৩. 'দুপুর থেকে সারা শহরে ভীষণ চাঞ্চল্য ও উত্তেজনা' কেন? 
উত্তর: জাহানারা ইমাম তার একাত্তরের দিনগুলি দিনপঞ্জিতে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবারে লিখেছিলেন দুপুর থেকে শহরে ভীষণ চাঞ্চল্য ও উত্তেজনা। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিকেল তিনটার সময় পাকিস্তানি সৈন্যরা বাংলাদেশের কাছে আত্মসমর্পণ করে সেই আত্মসমপর্ণের পূর্ব পর্যন্ত আকাশযুদ্ধ বিরতির কথা বলা হয়েছিল। সেদিন সকাল থেকেই দলে দলে লোক জয়বাংলা ধ্বনি তুলে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ছিল। পাকিস্তানি সৈন্যদের আত্মসমর্পণকে কেন্দ্র করে শহরে মানুষদের মধ্যে যে উত্তেজনা ও চঞ্চল মনোভাব বিরাজ করছিল তা প্রসঙ্গেই লেখিকা আলোচ্য কথাটি বলেছেন।

প্রশ্ন-১৪ পূর্ববাংলার কোন প্রতিভাধর বিবৃতিটি তৈরি করেছেন, জানতে বড় ইচ্ছে হচ্ছে ব্যাখ্যা করো। 
উত্তর: উক্তিটি দ্বারা বুদ্ধিজীবীদের নামে মিথ্যা বিবৃতি দিয়ে জবানবন্দি প্রকাশ করার অপচেষ্টার বিরুদ্ধে তীব্র শ্লেষ প্রকাশ পেয়েছে। যুদ্ধের সময় খবরের কাগজে ৫৫ জন বুদ্ধিজীবী ও শিল্পীর নামে এক বিবৃতি বেরিয়েছিল। এদের মধ্যে কেউ কেউ সানন্দে সই দিলেও বেশিরভাগ বুদ্ধিজীবী ও শিল্পী বেয়নেটের মুখে সই দিতে বাধ্য হয়েছেন বলে লেখিকার মনে হয়েছে এরকম নির্লজ্জ মিথ্যাভাষণ স্বয়ং গোয়েবলসও লিখতে পারতেন কি না সন্দেহ। তাই লেখিকা কটাক্ষ করে প্রশ্নোক্ত উক্তিটি করেছেন। 

বাংলা ১ম পত্র অনুধাবনমুলক প্রশ্ন উত্তর

Post a Comment

Previous Post Next Post