আম-আঁটির ভেঁপু গল্পের অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর (PDF ১০০% বোর্ড কমন উত্তর উত্তর)

 আম-আঁটির ভেঁপু' গল্পের অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর

আম-আঁটির ভেঁপু দিনগুলি গল্পের অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর। আম-আঁটির ভেঁপু গল্পকে বিশ্লেষণ করলে অনেকগুলো অনুধাবনমূলক প্রশ্ন পাওয়া যায় তার ভিতর বাছাইকৃত ও গুরুত্বপূর্ণ। নবম দশম শ্রেণীর বাংলা প্রথম পত্র আম-আঁটির ভেঁপু গল্পের প্রশ্ন উত্তর নিম্নে দেওয়া হলো

আম-আঁটির ভেঁপু গল্পের অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর

প্রশ্ন-১. দিদির কথায় নুন ও তেল আনতে অপু দ্বিধা করছিল কেন? 
উত্তর: তৎকালীন হিন্দুসমাজের সংস্কার অনুসারে বাসি কাপড়ে খাবার ছোঁয়া বারণ থাকায় এবং মায়ের হাতে মার খাওয়ার ভয়ে অপু দিদির কথায় নুন ও তেল আনতে দ্বিধা করছিল । কুড়িয়ে আনা আমের কুসিগুলো জারানোর জন্য দুর্গা অপুকে নুন ও তেল আনতে বলে। কিন্তু নুন ও তেল রাখা আছে রান্নাঘরে; আর বাসি কাপড়ে রান্নাঘরে যাওয়া যায় না বলেই শিক্ষা পেয়েছে অপু। তাছাড়া মায়ের হাতে মার খাওয়ার একটা ভয় আছে তার ভেতরে। তাই অপু দুর্গা তথা তার দিদির কথায় নুন ও তেল আনতে দ্বিধা করছিল ।

প্রশ্ন-২ দুর্গা-অপুর পারস্পরিক সম্পর্কের দিকটি তুলে ধরো
উত্তর. দুর্গা-অপুর পারস্পরিক সম্পর্ক ভাইবোনের চিরায়ত সুন্দর সম্পর্ককেই মনে করিয়ে দেয়। দুর্গা সারাদিন চঞ্চল ও দূরন্ত হয়ে ঘুরে বেড়ায়, সাথে সঙ্গী হয়, তার ছোট ভাই অপু। নানা জায়গা থেকে সংগ্রহ করা ফল দুই ভাইবোন মজা করে খায় । দুর্গা মাঝে মাঝে রাগ করে বাঁদর, হাবা বলে অপুকে— তাও যেন ভালোবাসার আবেগ। তাদের দুই ভাইবোনের সম্পর্ক মানুষের চিরায়ত শৈশবকে জীবিত করে তোলে । 

প্রশ্ন-৩ ‘তুই তো একটা হাবা ছেলে’ – দুর্গা একথা বলেছে কেন? 
উত্তর: ‘অপুকে সাবধান করতে গিয়ে দুর্গা বলেছে ‘তুই তো একটা হাবা আমের কুসি জারানোর জন্য দুর্গা অপুকে রান্নাঘরে তেল আর নুন আনতে পাঠাচ্ছিল। দূর্গা জানত মায়ের কাছে ধরা পড়ে গেলে মার খেতে হবে। তাই সে অপুকে সাবধান করে দিল যাতে রান্নাঘরে যেন তেল না পড়ে। অপু ভিতু প্রকৃতির বলে অঘটন ঘটাতে পারে ভেবে দুর্গা অপুকে হাবা ছেলে বলেছে।  

প্রশ্ন-৪ হরিহরের বাড়িটি দেখতে কেমন? 
উত্তর, হরিহরের বাড়িটি তার দরিদ্রতার দিকটি স্পষ্টভাবেই তুলে ধরে। টাকা-পয়সার অভাবে তার বাড়িটা দীর্ঘদিন ধরে মেরামত করা হয়নি। বাড়ির সামনের দিকের রোয়াক ভাঙা, ফাটলে বন-বিছুটি ও কালমেঘ গাছের বন গজিয়েছে। ঘরের দরজা-জানালার কপাট সব ভাঙা, নারিকেলের দড়ি দিয়ে গরাদের সঙ্গে বাঁধা আছে। এক কথায়, হরিহরের বাড়িটি বেশ জীর্ণ ও ভাঙাচোরা ছিল।

প্রশ্ন-৫ হরিহরের আর্থিক অবস্থা কেমন? 
উত্তর, হরিহর অর্থনৈতিকভাবে একেবারেই সচ্ছল ছিল না। হরিহরের বাড়ি-ঘর, দৈনন্দিন জীবন তার দরিদ্রতার দিকটিকেই তুলে ধরে। সে ভীষণভাবে ঋণগ্রস্ত ছিল। সে তার ছোট ছেলেমেয়েগুলোকে ভালোভাবে খাওয়াতে-পরাতেও হিমশিম খেত। 

প্রশ্ন-৬ অপু ও দুর্গার আম খাওয়ার ব্যাঘাত ঘটল কেন? 
উত্তর: মা বাড়ি ফিরে আসায় অপু ও দুর্গার আম খাওয়ার ব্যাঘাত ঘটল। মা বাড়ির বাইরে ক্ষার কাচতে গেলে অপু ও দুর্গা কুড়িয়ে আনা আম কেটে লবণ মাখিয়ে খেতে থাকল। তাদের মা সর্বজয়া এ কাজটি পছন্দ করে না। তাদের কুড়িয়ে আনা আম খেতে দেখলে শাসন করবেন। এ কারণে সর্বজয়া বাড়িতে ফিরে এলে ভয়ে অপু ও দুর্গার আম খাওয়ার ব্যাঘাত ঘটল । 

প্রশ্ন-৭ একটুখানি কুটোগাছটা দু খানা করা নেই।' সর্বজয়া একথা বলেছেন কেন? 
উত্তর: কোনো কাজে সাহায্য না করে সারাদিন ঘুরে বেড়ায় বলে মা সর্বজয়া দুর্গাকে এ কথা বলেছে। আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পে দুর্গা সারাদিন এদিক-সেদিক ঘুরে বেড়ায়। খিদে লাগলে সে বাড়িতে ফিরে আসে। মায়ের কাজে সাহায্য না করে সারাদিন ঘুরে বেড়ায় বলে সর্বজয়া দুর্গাকে প্রশ্নোক্ত কথাটি বলেছে

প্রশ্ন-৮ 'স্বর্ণ গোয়ালিনী গাই দুহিতে আসায় কথাটা চাপা পড়িয়া গেল। কোন কথা চাপা পড়ল? 
উত্তর: স্বর্ণ গোয়ালিনী গাই দুহিতে আসায় আম খাওয়ার কথাটি চাপা পড়ল। একদিন দুর্গা পটলিদের বাগানের সিঁদুরকৌটোর তলা থেকে আম কুড়িয়ে আনে এবং সে আমের অংশ ছোট ভাই অপুকেও খেতে দেয়। দুর্গার ঘুরে বেড়ানোর বিষয়টি মা সর্বজয়া পছন্দ করে না। তাই আম খাওয়ার কথাটি সে মায়ের কাছে বলতে অপুকে নিষেধ করে। কিন্তু অপু ভুল করে আম খাওয়ার প্রসঙ্গটি মায়ের সামনে উপস্থাপন করে ফেলে। এমতাবস্থায় মা দুর্গাকে আম কুড়িয়ে আনার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে স্বর্ণ গোয়ালিনীর ডাকে সাড়া দিতে গিয়ে কথাটি চাপা পড়ে যায়। 

প্রশ্ন-৯ দুর্গা অপুকে কিল দিল কেন? 
উত্তর: দুর্গা অপুকে কিল দিল কারণ আম খাওয়ার কথা মায়ের সামনে হঠাৎ বলে ফেলায়। অপু চাল ভাজা খাওয়ার সময় তার মাকে হঠাৎ করে বলে ফেলে আম খেয়ে দাঁত টক হয়ে গেছে, চিবানো যায় না। আম কোথায় পেল তার মা জানতে চায়। অপু সত্য প্রকাশ করতে সাহস না পেয়ে দুর্গার দিকে তাকালে মা দুর্গাকে বকা দেয়। পরে অপু বাইরে দুধ দোয়ানো দেখতে গেলে দুর্গা অপুকে দুম করে এক কিল দেয়। 
প্রশ্ন-১০ দুর্গা কেমন করে তার দিন কাটায়? 
উত্তর: দুর্গা ব্যাপক চঞ্চলতা ও দুরন্তপনার মধ্য দিয়ে তার দিন কাটায়। দুর্গা সারাদিনই গ্রামের এদিক সেদিক দিয়ে ঘুরে বেড়ায়। কখনো এর বাড়ি, কখনো ওর বাড়ির ফলগাছ থেকে ফল আনতে ব্যস্ত থাকে। রোদ-বৃষ্টির তোয়াক্কা না করেই সে গাঁয়ের এ পাড়া, ও পাড়া মাতিয়ে বেড়ায়। কখনো ছোট ভাইয়ের সাথে খেলে, কখনো ঝগড়া করে হেসে খেলে তার দিন কাটায়। 

প্রশ্ন-১১ “অত বড় মেয়ে, বলে বোঝাৰো কত? কথা শোনে, না কানে নেয়?” – কথাটি বুঝিয়ে লেখো। 
উত্তর: হরিহর দুর্গাকে বাড়িতে না দেখে তার স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করায় সর্বজয়া উল্লিখিত উক্তিটি করে। দুর্গা দুরন্ত। বনবাদাড়ে ঘুরে বেড়ায় সব সময়। খিদে পেলেই বাড়িতে আসে। কোথায় কার বাগানে কার আমতলায়, জামতলায় ঘুরে বেড়ায় কেউ জানে না। তাই তো হরিহর দুর্গাকে দেখতে না পেয়ে তার কথা জিজ্ঞেস করায় সর্বজয়া আলোচ্য উক্তিটি করে। 

প্রশ্ন-১২ সর্বজয়া হরিহরকে মন্তর দেওয়ার কথা বলে কেন? 
উত্তর: সর্বজয়া হরিহরকে মন্তর দেওয়ার কথা বলে সামান্য টাকায় সংসার চলে না বলে বাড়তি কিছু টাকার আশায়। হরিহরের অভাবের সংসার। রায়বাি কাজ করে মাত্র আট টাকা পাওয়া যায়। তাও আবার দুতিন মাস পর পর দেয়। এতে সংসার চলে না। তার ওপর আছে ঋণের বোঝা। পাওনাদাররা টাকা চায় কঠিন ভাষায়। ছেলেমেয়েদের ভালো কাপড় নেই। ছেঁড়া কাপড় পরেই তারা ঘুরে বেড়ায়। মন্তর দিলে তো কিছু পয়সা পাওয়া যাবে। তাই সর্বজয়া হরিহরকে মন্তর দেওয়ার কথা বলেন। 
প্রশ্ন- ১৩ হরিহর দশঘরা গ্রামের মাতবর লোকটির পরিচয় গোপন রাখতে বলেছিল কেন? 

উত্তর: নীচু জাতের বলে হরিহর দশঘরা গ্রামের মাতবর লোকটির পরিচয় গোপন রাখতে বলেছিল। হরিহর স্ত্রী সর্বজয়াকে একটি দশঘরা গ্রামের অবস্থাপন্ন একটি লোকের কথা জানায় যে হরিহরকে মন্ত্র দেওয়ার প্রস্তাব করেছে সর্বজয়া। লোকটির জাতের কথা জিজ্ঞেস করলে হরিহর কণ্ঠ নামিয়ে কাউকে বলতে নিষেধ করে। কেননা লোকটি সদগোপ অর্থাৎ নীচু বর্ণের। 

প্রশ্ন-১৪ ‘ও রকম একটা বড় মানুষের আশ্রয় — এ গায়ে তোমার আছে কী?'— কথাটি বুঝিয়ে লেখো। 
উত্তর: আলোচ্য উক্তিটি সর্বজয়া তার স্বামী হরিরকে উদ্দেশ্য করে বলেন । হরিহর তাগাদায় গেলে একজন পয়সাওয়ালা লোকের সাথে দেখা হয়। লোকটি তাকে তার বাড়িতে মন্তর দিতে বলেন। তিনি আরও বলেন, তার গাঁয়ে গিয়ে বামুন হতে এবং বলেন তাকে জমিভিটাও দেওয়া হবে। এতে তাৎক্ষণিক কোনো মত হরিহর তাকে দেননি। তাই স্ত্রী সর্বজয়া দুঃখ করে বলেন, তুমি রাজি হলে না কেন? এখানে আছে কী? শুধু ভিটে কামড়ে পড়ে থেকে লাভ কী? 

প্রশ্ন-১৫ দশঘরার লোকটির অনুরোধে হরিহর তৎক্ষণাৎ সেখানে যেতে রাজি হলো না কেন? 

উত্তর: দশঘরার লোকটির অনুরোধে হরিহর তৎক্ষণাৎ সেখানে যেতে রাজি হলো না তার আত্মসম্মানবোধের কারণে। হরির দশঘরায় তাগাদার জন্য গিয়ে যে লোকটির সাক্ষাৎ পান সেই লোকটি হরিহ্রকে তার বাড়িতে মন্তর দিতে অনুরোধ করেন। কিন্তু হরিহর ভেবেছিলেন তৎক্ষণাৎ রাজি হলে সদগোপ জাতের লোকটি তার সম্পর্কে নিম্ন ধারণা পোষণ করতে পারেন। তাছাড়া তিনি নিজে জাতে ব্রাহ্মণ হওয়ায় নীচু জাতের লোকটির কাছে সম্মান বজায় রাখতে চেয়ে ছিলেন। তাই লোকটির প্রস্তাবে হরিহর তৎক্ষণাৎ রাজি হলো না। 

প্রশ্ন-১৬ অপুর বাবা কেন সহজে গ্রাম ছেড়ে যেতে চাইল না? 
উত্তর: আত্মসম্মানবোধে ও ধার-দেনা শোধের অপারগতায় অপুর বাবা সহজে গ্রাম ছেড়ে যেতে চাইল না। অপুর বাবা হরিহরকে দশ ঘরার সদগোপ সম্প্রদায়ের এক লোক তাদের গাঁয়ে চলে এসে বামুন হিসেবে সপরিবারে বসবাসের প্রস্তাব দেয়। আর্থিক চরম দুরবস্থা সত্ত্বেও হরির প্রস্তাবটিতে সরাসরি সম্মতি দেয়নি। কারণ এতে সদগোপ সম্প্রদায়ের লোকেরা হরিহরের দারিদ্র্যের বিষয়টি জেনে যাবে। তাছাড়া হরিহরের অনেক ধার-দেনা ছিল । আবাস পরিবর্তনের সংবাদ শুনে পাওনাদাররা এসে তার কাছে টাকা চাইবে। তাই আত্মসম্মানবোধ ও ধার-দেনার টানাপড়েনে অপুর বাবা সহজে গ্রাম ছেড়ে যেতে চাইল না। 

প্রশ্ন-১৭ দুর্গা পা টিপে টিপে বাড়িতে প্রবেশ করল কেন? 
উত্তর: মাকে ভয় পাওয়ায় তার কাছে ধরা না পড়ার জন্য দুর্গা পা টিপে টিপে বাড়ি প্রবেশ করে। দুর্গা সারাদিন বাইরে থাকে। বনে-বাদাড়ে ঘুরে বেড়ায়। এসব কারণে সর্বজয়া তার ওপর ভারী ক্ষিপ্ত। তাই তার মা চোখের আড়াল হতে দেয় না। তবুও দুর্গা মায়ের চোখকে ফাঁকি দিয়ে বাইরে গিয়ে পুনরায় বাড়িতে প্রবেশের সময় টিপে টিপে পা ফেলে, যাতে তার মা বাইরে যাওয়ার বিষয়টি জানতে না পারে। 

প্রশ্ন- ১৮ সম্মুখ দুয়ার দিয়ে দুর্গার বাড়িতে ঢোকার সাহস হলো না কেন? 
উত্তর: মায়ের শাসনের ভয়ে দুর্গার সম্মুখ দুয়ার দিয়ে বাড়িতে ঢোকার সাহস হলো না। দুর্গার আনন্দ খেলাধুলা ও প্রকৃতির মাঝে ঘুরে বেড়ানোর মধ্যে। যদিও দুর্গার বয়সের মেয়েরা বাড়ির বাইরে না গিয়ে বরং মায়ের কাজে সহযোগিতা করে। কিন্তু দুর্গা মায়ের চোখ ফাঁকি দিয়ে সকাল থেকেই বাড়ির বাইরে বনে-জঙ্গলে ঘুরে বেড়িয়েছে। এ কারণেই দুপুরে সে মায়ের সামনে দিয়ে ঘরে প্রবেশের সাহস পায়নি। 

বাংলা ১ম পত্র অনুধাবনমুলক প্রশ্ন উত্তর

Post a Comment

Previous Post Next Post