উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন গল্পের অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর(PDF ১০০% বোর্ড কমন উত্তর উত্তর)

উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন গল্পের অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর

উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন দিনগুলি গল্পের অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর।উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন গল্পকে বিশ্লেষণ করলে অনেকগুলো অনুধাবনমূলক প্রশ্ন পাওয়া যায় তার ভিতর বাছাইকৃত ও গুরুত্বপূর্ণ। নবম দশম শ্রেণীর বাংলা প্রথম পত্র উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন গল্পের প্রশ্ন উত্তর নিম্নে দেওয়া হলো

উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন গল্পের অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর

প্রশ্ন-১. দেশের অধিবাসী লইয়াই তো দেশ এবং ব্যক্তির সমষ্টিই তো জাতি।বাক্যটি বুঝিয়ে লেখো। 
উত্তর: দেশের সকল অধিবাসী তথা সকল ব্যক্তির সমন্বয়ই দেশ ও জাতির আসল শক্তি— প্রশ্নোক্ত বাক্যটি দ্বারা এ' কথাই বোঝানো হয়েছে। দেশের দশ আনা শক্তি নির্ভর করে যাদের ওপর অভিজাত-গর্বিত সম্প্রদায় সেই হতভাগাদের নামকরণ করেছে ছোটলোক সম্প্রদায়। অথচ ধনীদরিদ্র, উঁচু-নিচু সকলের সম্মিলিত শক্তি ও প্রয়াসের দ্বারাই কেবল জাতীয় উন্নয়ন সম্ভব। কেননা একটি ভূখণ্ডের সকল অধিবাসীদের সমন্বয়েই গঠিত হয় দেশ আর একই সংস্কৃতির সকল মানুষের সমন্বয়ে গঠিত হয় জাতি। অর্থাৎ একটি দেশের সকল মানুষেরই সম্মিলিত শক্তির ওপরই নির্ভর করে একটি দেশের অস্তিত্ব তথা সামগ্রিক উন্নয়ন। 

প্রশ্ন-২, আমরা কেন ছোটলোকদের উপেক্ষা করে আসছি? 
উত্তর: সামাজিক, অর্থনৈতিক ও শিক্ষাগত অবস্থানের দিক থেকে অন্যজ শ্রেণির মানুষ অনেক পিছিয়ে থাকায় আমরা তাদের উপেক্ষা করছি। ছোটলোকরা প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তথা শ্রমিকশ্রেণির হওয়ায় তাদের আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। শিক্ষার দিক দিয়ে পিছিয়ে থাকার ফলে সামাজিক অবস্থানেও তারা নীচুস্তরে আছে। এসব দিক থেকে ভদ্রসম্প্রদায়ের সমকক্ষ না হওয়ায় আমরা ছোটলোকদের উপেক্ষা করে আসছি। 

প্রশ্ন-৩. 'কাচের ন্যায় স্বচ্ছ অন্তর' বলতে লেখক কী বুঝিয়েছেন? 
উত্তর: 'কাচের ন্যায় স্বচ্ছ অন্তর' বলতে লেখক কথিত ছোটলোকদের সরল, মুক্ত ও উদার প্রাণের কথা বুঝিয়েছেন। সমগ্র বিশ্ব দুই শ্রেণিতে বিভক্ত। একটা হচ্ছে শোষক, অপরটা শোষিত শ্রেণি। কাজী নজরুল ইসলাম সারা জীবন এই শোষিত শ্রেণিরই জাগরণ প্রত্যাশা করেছেন। কথিত ‘ছোটলোক সম্প্রদায়ের' সরল-স্বচ্ছ মনের বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি তাদের মনকে কাচের ন্যায় স্বচ্ছ অন্তর বলেছেন। 

প্রশ্ন-৪. ছোটলোকদের স্বভাবে সংকোচ আর জড়তা জড়িয়ে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করো। 
উত্তর: জন্ম থেকে ঘৃণা আর উপেক্ষা পাওয়ার কারণে ছোটলোকদের স্বভাবে সংকোচ আর জড়তা জড়িয়ে যায়। ছোটলোকদের সন্তানরাও ছোটলোক হয়ে পৃথিবীতে জন্ম নেয়। জন্মের পর থেকেই ভদ্রশ্রেণির মানুষ তাদের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণ করে। এ আচরণে থাকে দারুণ ঘৃণা আর উপেক্ষা। এ ধরনের অবজ্ঞাসূচক আচরণ সহ্য করতে করতে ছোটলোকদের স্বভাবে সংকোচ আর জড়তা জড়িয়ে যায়। 

প্রশ্ন-৫ ‘কাজেই তোমাদের এই দেশকে, জাতিকে উন্নত করিবার আশা ঐ কথাতেই শেষ হইয়া যায়’ বলতে লেখক কী বোঝাতে চেয়েছেন?
 উত্তর: ভদ্রসমাজ কেবল দেশের উন্নতির কথা বলতে পারেন কিন্তু বাস্তবায়ন করতে প্রয়োজন তথাকথিত ছোটলোকদের আমাদের সমাজের ভদ্রসম্প্রদায় বলে পরিচিত লোকেরা জাতির দুর্গতি বোঝে এবং বুঝাতেও পারে। আবেগ দিয়ে তারা কাঁদাতেও পারে । অর্থাৎ তারা পরিকল্পনা করতে পারে। কিন্তু তাকে কার্যকর করার ক্ষমতা তাদের নেই। কারণ তারা কর্মী নন। সে পরিকল্পনাকে কার্যকর করতে প্রয়োজন শ্রমিক তথা ছোটলোক সম্প্রদায়। 

প্রশ্ন-৬ জাতিকে উন্নত করবার আশা কেন শেষ হয়ে যায় বলে লেখক বলেছেন? 
উত্তর: শুধু মুখে বলে কাজ না করার কারণে জাতিকে উন্নত করবার আশা শেষ হয়ে যায় বলে লেখক মনে করেন। আমারা যারা ভদ্র সম্প্রদায়, দেশের দুর্দশা বুঝি, মানুষকে বোঝাতে পারি এবং দুর্ভাগ্যের কথা বলে কাঁদতে পারি অথচ কর্মক্ষেত্রে কাজ করার শক্তি আমাদের নেই। এই কথাতেই আমাদের দেশকে, জাতিকে উন্নত করবার আশা শেষ হয়ে যায়। 

প্রশ্ন-৭ জনগণকে দিয়ে শত বৎসরের কাজ একদিনে কীভাবে সম্পন্ন করা যায় লেখ। 
উত্তর: যদি একবার শ্রমজীবী মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা যায় তাহলে শত বছরের চেষ্টায় যে কাজ হয়নি একদিনে সেই কাজ সম্পন্ন হবে বলে লেখক মনে করেন। আমাদের সর্বশ্রেণির জনশক্তিকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। তাদেরকে মানুষ ভেবে ভাই বলে ডাক দেবার উদারতা থাকতে হবে। তাদের ভেতরের শক্তির উন্মেষ ঘটালেই শত বৎসরের কাজ একদিনে সম্পন্ন করা যায়। 

প্রশ্ন-৮ মহাত্মা গান্ধীর কথা লেখক ভেবে দেখতে বলেছেন কেন?
উত্তর: মহাত্মা গান্ধী সকল মানুষকে ভালোবেসে ভারতে অসাধ্য সাধন করতে পেরেছিলেন বলে লেখক তাঁর কথা ভেবে দেখতে বলেছেন। মহাত্মা গান্ধী সকলের সাথে প্রাণ খুলে মিশতেন, তাদের সুখ-দুঃখের ভাগী হতেন। কেউ খেতে না পেলে তার সঙ্গে উপবাস করতেন। তিনি আভিজাত্য ও পদ গৌরবের অহঙ্কার না করে ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সকলকে বুকে ধরে ভাই বলে ডাকতেন। তাই লেখক মহাত্মা গান্ধীর কথা ভেবে দেখতে বলেছেন। 

প্রশ্ন-৯ উপেক্ষিত হতভাগারা মহাত্মা গান্ধীর দিকে ছুটছে কেন?
উত্তর: মহাত্মা গান্ধী উপেক্ষিত হতভাগাদের জাতি-ধর্ম-বর্ণ বিবেচনা না করে সকলের সাথে সমানভাবে মিশেছেন বলে তারা তাঁর দিকে ছুটেছিল। মহাত্মা গান্ধী সকল বর্ণের মানুষদের সাথে প্রাণ খুলে মিশেছিলেন। তিনি তথাকথিত নিম্নবর্ণের লোকদের দুঃখের ভাগী হয়েছিলেন নিজের বুকের রক্ত দিয়ে। তাদের সাথে উপবাস করে তাদের সাথে মিশে গিয়েছিলেন। তাদেরকে ভাই বলে ডেকে বুকে জড়িয়ে ধরেছিলেন বলেই তাঁর আহ্বানে এই উপেক্ষিত হতভাগারা তাঁর দিকে ছুটেছিল। 
প্রশ্ন-১০, উপেক্ষিত শ্রেণি কীভাবে অসাধ্যকে সাধন করবে? 

উত্তরঃ উপেক্ষিত শ্রেণির জাগরণ ঘটলে তাদের সম্মিলিত শক্তিতে তারা অসাধ্যকে সাধন করবে। উপেক্ষিত সম্প্রদায়ের হাতেই সভ্যতার বিনির্মাণ হয়। এ সম্প্রদায় কিন্তু সমাজে অবহেলা, বঞ্চনার শিকার হয়। গুটি কয়েক ভদ্রসম্প্রদায়ের মানুষ এই বিশাল সংখ্যাক মানুষকে কোণঠাসা করে রাখে। তাই পাঞ্জেরী মাধ্যমিক সৃজনশীলবাংলা প্রথম পত্র গদ্য শ্মজীবী এই শ্রেণিকে যথার্থ অধিকার দেয়া হলে তারা কঠোর পরিশ্রম ও নিরলস প্রচেষ্টা দিয়ে অসাধ্যকে সাধন করবে। 

প্রশ্ন-১১. উপেক্ষিত শক্তি নিয়ে লেখকের আশাবাদ কীরূপ? ব্যাখ্যা করো। 
উত্তর: উপেক্ষিত শক্তিরাই দেশে যুগান্তর আনবে- লেখক এরকম আশা পোষণ করেন। লেখক উপেক্ষিত শক্তিদের মহা আহ্বানে ডাকতে বলেছেন, যেমনি করে মহাত্মা গান্ধী ডেকেছেন। বুকভরা স্নেহ দিয়ে ডাকলে তারা সাড়া দেবেই। তাই উপেক্ষিত শক্তিকে বোধন করলে এরাই দেশে যুগান্তর আনবে, অসাধ্য সাধন করবে।
প্রশ্ন-১২ তোমার আত্মা কি শিহরিয়া উঠিবে না?' বুঝিয়ে লেখো।

উত্তর: উপেক্ষিত শ্রেণির মানুষদের অবহেলা ও অবজ্ঞা করার আগে নিজ আত্মোপলব্ধি বোঝাতে আলোচ্য উক্তিটি করা হয়েছে। সমাজে এমন অনেক উঁচু জাতের মানুষ আছে যারা নিচু জাত তথ্য উপেক্ষিত শ্রেণির মানুষদের অবহেলা ও অবজ্ঞা করে। এতে তারা কেমন দুঃখ অনুভব করে তা উঁচু জাতের মানুষ বুঝতে পারেনা। তাই ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন' প্রবন্ধে লেখক আলোচ্য উক্তিটির দ্বারা তাদের সেই মর্মবেদনা উপলব্ধি করার প্রতি ইঙ্গিত দিয়েছেন।

প্রশ্ন-১৩.বোধন-বাঁশিতে সুর দেওয়া বলতে’ ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন' প্রবন্ধে কী বোঝানো হয়েছে? 
উত্র: ‘বোধন-বাঁশিতে সুর' দেওয়া বলতে ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন প্রবন্ধে তথাকথিত ছোটলোক সম্প্রদায়কে জাগিয়ে তোলার বিষয়টি বোঝানো হয়েছে। প্রাবন্ধিক লক্ষ করেছেন যে, আমাদের সমাজে ছোটলোক সম্প্রদায় বলতে আমরা যাদের বুঝি তারাই সমাজ-প্রগতির কাণ্ডারি। কিন্তু ভদ্র সম্প্রদায় নিজেদের স্বার্থে সবসময় এ শ্রেণিকে অবদমন করে থাকে। এ বিষয়টিকে মানতে পারেননি প্রাবন্ধিক। তাই তিনি ওই ছোটলোক তথা উপেক্ষিত সম্প্রদায়কে জাগিয়ে নিয়ে সমাজ-প্রগতির মূল স্রোতে বেড়াতে চেয়েছেন। 

প্রশ্ন-১৪ বোধন বাঁশি' বলতে কী বোঝানো হয়েছে? 
উত্তর: বোধন বাঁশি' বলতে নিদ্রাচ্ছন্ন অসচেতনদের বোধ জাগিয়ে তোলাকে বোঝানো হয়েছে। বোধন বাঁশি' হলো বোধ জাগিয়ে তোলার বাঁশি। কবি এখানে বৈষম্যহীন সমাজ গঠনে মানুষকে আত্মসচেতন করে তোলাকে বুঝিয়েছেন। শ্রেণিবৈষম্যের কারণে আমরা আজ অধঃপতিত। আমাদের দেশ ও জাতির কোনো উন্নতি সাধিত হচ্ছে না। এ অবস্থার অন্যতম কারণ দেশের দশ আনা উপেক্ষিত শক্তিকে কাজে না লাগানো, তাদের জাগরণ না ঘটানো। তাই কবি ‘বোধন বাঁশি' দ্বারা মানুষদের মধ্যে এই বোধ জাগিয়ে তুলতে চেয়েছেন।


বাংলা ১ম পত্র অনুধাবনমুলক প্রশ্ন উত্তর

Post a Comment

Previous Post Next Post