মমতাদি গল্পের অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর (PDF ১০০% বোর্ড কমন উত্তর উত্তর)

 মমতাদি গল্পের অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর

মমতাদি দিনগুলি গল্পের অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর।মমতাদি গল্পকে বিশ্লেষণ করলে অনেকগুলো অনুধাবনমূলক প্রশ্ন পাওয়া যায় তার ভিতর বাছাইকৃত ও গুরুত্বপূর্ণ। নবম দশম শ্রেণীর বাংলা প্রথম পত্র মমতাদি গল্পের প্রশ্ন উত্তর নিম্নে দেওয়া হলো
মমতাদি গল্পের অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও  উত্তর

প্রশ্ন-১ কাজগুলিকে সে আপনার করে নিল, মানুষগুলির দিকে ফিরেও তাকাল না'- উক্তিটি বুঝিয়ে লেখো। 
উত্তর: আলোচ্য কথাটি মমতাকে উদ্দেশ করে বলা হয়েছে কাজের প্রতি তার ভালোবাসা দেখে। গল্পকথকছেলেটির প্রত্যাশা ছিল মমতাদি তাকে আপন করে নেবে। কিন্তু ভালোবাসার কোনো লক্ষণ না দেখে তিনি ক্ষুণ্ন হলে। দুবার খাবার জল চাইল, চার-পাঁচবার রান্নাঘরে মমতার কাছে গিয়ে দাঁড়ালেও তাকে সে রীতিমতো উপেক্ষা করল। বাড়ির সবার সাথেই তার এমন ব্যবহার। কিন্তু কাজগুলোকে সে ভালোবেসেই করে গেল।

প্রশ্ন-৩ আজ প্রথম দেখলাম, সে নিজের মনে হাসছে'— কথাটি বুঝিয়ে লেখো। 
উত্তর: মমতার গম্ভীর মুখের বাইরে হাস্যোজ্জ্বল মুখটি গল্পকথক খুব কাছ থেকে দেখতে পেয়ে আলোচ্য উক্তিটি করেছে। গল্পকথক ছেলেটি একদিন বাড়িতে কুটুমের আনা রসগোল্লা আর সন্দেশ গোপনে খাওয়ার সময় মমতার হাতে ধরা পড়ে। মমতা অসুখ হবে বলে ছেলেটিকে আর খেতে বারণ করে এবং তাকে জল খেতে ডাকে। ছেলেটি এতে মুগ্ধ হয়ে যায়। এতদিন সে রান্নাঘরে তার পাশে বসে যে মুখ · দেখেছিল, তাতে ছিল না কোনো গম্ভীরতা। এই প্রথম সে দেখল তার মুখ হাসছে 

প্রশ্ন-৪ মমতাদি' গল্পে 'বামুনদি' শব্দটি কেন ব্যবহৃত হয়েছে? বুঝিয়ে বলো। 
উত্তর; 'মমতাদি' গল্প 'বামুনদি' বলতে রাঁধুনীকে বোঝানো হয়েছে। বামুনদি হলো ব্রাহ্মণদিদির সংক্ষিপ্ত রূপ। আগে রান্না বা গৃহকর্মে যে ব্রাহ্মণকন্যারা নিয়োজিত হতে, তাদের কথ্যরীতিতে বামুনদি ডাকা হতো। মমতাদিও ছোট ছেলেটির বাড়িতে রাধুনী হিসেবেই কাজ নিয়েছিল। তাকে সম্বোধন করতেই ছোট ছেলেটির মুখে বামুনদি শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছিল। 

প্রশ্ন-৫ বেশি আস্কারা দিও না, জ্বালিয়ে মারবে'- উক্তিটি কেন বলা হয়েছে? বুঝিয়ে লেখো। 
উত্তর: মমতাদি সম্মানিত হয়ে আবেগে চোখের জল ফেলল । গল্পকথক ছেলেটিকে একদিন মমতাদি আদর করার সময় ছেলেটির মা আসে। মমতাদি ভয়ে বিব্রত হয়ে যায়। মা তখন হেসে বলেন, বেশি আস্কারা না দিতে। ছেলেটির মা চলে গেলে মমতার চোখ দিয়ে দুর্বোধ্য রহস্যঘেরা চোখের জল টপ টপ করে ঝরে পড়ে। চোখের এ জল সম্মানের।

প্রশ্ন-৬ স্বামীর চাকরি হওয়ার পরও কেন মমতাদি রাঁধুনীর কাজ করতে চাইল? 
উত্তর: আত্মনির্ভরশীল হয়ে আত্মসম্মান রক্ষা করতে চেয়েছে বলেই স্বামীর চাকরি হওয়ার পরও মমতাদি রাঁধুনীর কাজ করতে চাইল। চার মাস স্বামীর চাকরি ছিল না বলে পর্দা ঠেলে মমতাদিকে উপার্জনের জন্য বাইরে আসতে হয়েছে। তবে নিজের সংসারে সে যে অবহেলার শিকার তা গল্পকথকের সঙ্গে কথোপকথনের মধ্য দিয়েই প্রকাশ পেয়েছে। সে অবহেলা থেকে পরিত্রাণ পেতেই মমতাদি আত্মনির্ভরশীলতার পথ বেছে নেয়। তাই স্বামীর চাকরি হওয়ার পরও মমতাদি রাঁধুনীর কাজ করতে চাইল। 

প্রশ্ন-৭ ‘একটা অন্ধকার রহস্যের আড়ালে সে যেন নিজেকে লুকিয়ে ফেলল – কেন? 
উত্তর: নিজের ভিতরের দুর্বিষহ কষ্ট যেন কেউ বুঝতে না পারে সে জন্য মমতাদি নিজেকে লুকাতে চেয়েছে। মমতাদি আত্মমর্যাদা সম্পন্ন ঘরের নারী হয়েও স্বামীর সংসার টিকিয়ে রাখার জন্য কাজ করতে ঘর থেকে বের হয়েছে, অথচ স্বামী তাকে অত্যাচার করত। খোকার চোখে বিষয়টি ধরা পড়ে। আত্মসম্মানে আঘাত লাগার ভয়ে মমতাদি খোকার কাছেও বিষয়টি এড়িয়ে গেছে।

প্রশ্ন-৮ 'মিথ্যা বললে কী হয় খোকা?' মমতা কেন গল্পকথক ছেলেটিকে  
উত্তর: মমতা তার কাজ ছেড়ে দেওয়ার কারণ লুকাতে মিথ্যে বলার অপরাধবোধ থেকে গল্পকথককে এ কথা বলে। মমতার স্বামীর চাকরি হয়েছে, তবু সে বাড়ির কাজ না ছাড়ার কারণ হিসেবে তার স্বামীর সামান্য চাকরির কথা বলে। আসলে সে মিথ্যে বলেছিল গল্পকথকের পরিবারের সাথে তার মায়ার বন্ধনের বিষয়টি লুকাতে। সে ভালোবাসার বন্ধন ছিন্ন করতে চায় না। কিন্তু শুধু এই ভালোবাসার বন্ধনের কারণেই তো কাজ করা যায় না ভেবে সে স্বামীর সামান্য চাকরি করার ব্যাপারে মিথ্যে বলে। 

প্রশ্ন-৯লেখককে বাসায় নিতে মমতাদির অনিচ্ছা প্রকাশের কারণ কী? 
উত্তর: লেখককে বাসায় নিতে মমতাদির অনিচ্ছা প্রকাশের কারণ বাড়ির পরিবেশ ও সাংসারিক দৈন্য। মমতাদি জীবনময়ের গলির ছোট একটি অন্ধকার ঘরে স্বামী-সন্তান নিয়ে বাস করে। লেখক অবস্থাপন্ন ঘরের ছেলে। মমতাদি তাই ভাবে লেখককে নিয়ে গেলে লেখক হয়তো বিরক্ত হবেন। দারিদ্র্য আর সঙ্কোচের কারণেই লেখককে বাসায় নিতে মমতাদি অনিচ্ছা প্রকাশ করে। 

প্রশ্ন-১০ মনে হচ্ছে পাতালে চলেছ, না? এই উক্তিটির কারণ ব্যাখ্যা করো। 
উত্তর: বিশ্রী নোংরা গলির ভেতরে অন্ধকারময় পরিবেশে মমতাদি বাস করত বলে তার বাড়ি যাওয়ার সময় গল্পকথককে মমতাদি এ প্রশ্ন করেছে। মমতাদির বাড়ি যাওয়ার সময় গল্পকথক দেখতে পেলো যে জীবনময় গলিতে মমতাদি থাকত তা খুব বিশ্রী ও অপরিচ্ছন্ন গলি। গলিটা ছিল আস্ত ইট দিয়ে বাঁধানো, পায়ে পায়ে ক্ষয় হয়ে গেছে। আর দুদিকের বাড়ির চাপে অন্ধকার এখানে ওখানে জমে ছিল আবর্জনা আর একটি দূষিত চাপা গন্ধ। মমতাদির বাড়ি যেতে যেতে লেখকের মনে হলো। পাতালে চলেছে, তাই এ কথাটি বলেছেন। 

প্রশ্ন- ১১ 'সবাই যদি তোমার মতো ভালোবাসত। - মমতাদি এ কথা কেন বলেছে? 
উত্তর: লেখকের সরলতার কারণেই মমতাদি 'সবাই যদি তোমার মতো ভালবাসত' – এ কথাটি বলেছে। মমতাদি লেখকের বাড়িতে কাজ নিলে গল্পকথক মমতাদিকে পছন্দ করে। এবং তার স্নেহ পেতে মরিয়া হয়ে ওঠে। একপর্যায়ে মমতাদির সঙ্গে তার ভাব হয়। গল্পকথকের এই সরল ভালোবাসা মমতাদির শত অশান্তির মাঝেও তার মাতৃত্বকে জাগিয়ে তোলে। এ জন্য মমতাদি আলোচ্য উক্তিটি করে। 

প্রশ্ন-১২ 'তোমার খিদে পেয়েছে, তুমি এবার বাড়ি যাও ভাই’ – মততাদির এই কথাটির বলার কারণ কী? 
উত্তর: ঘরের অপ্যায়ন করার উপকরণ না থাকায় প্রখর আত্মসম্মানবোধের অধিকারী মমতাদি এই কথা বলেছেন। মমতাদি সংসারের অভাবের কারণে মর্যাদাসম্পন্ন নারী হয়েও পরের বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ নেন। অপরের বাড়িতে কাজ করলেও তার ভেতরের মর্যাদা ও মানবিক গুণাবলির অভাব ছিল না। সে নিজে যেমন আদর ও সম্মানপ্রত্যাশী, তেমনি অন্যকেও স্নেহ ও ভালোবাসা দেওয়ার ক্ষেত্রে তার কোনো কার্পণ্য ছিল না। এ কারণে ঘরের ছোটকর্তা তার কাছে ভ্রাতৃপ্রতিম স্নেহ ও ভালোবাসা লাভ করে। একদিন জোরাজুরির কারণে অগত্য মমতাদি তাঁর অভাবের সংসারের তাকে নিয়ে যান। কিন্তু অতিথি আপ্যায়ন করার মতো কোন খাদ্যসামগ্রী তাঁর ঘরে ছিল না। মাদুর পেতে তাকে বসতে দেওয়া হয়। ঘরে তাঁর ওষুধ-পথ্যহীন পাঁচ বছরের অসুস্থ শিশু। অনেকক্ষণ অবস্থানের পর কেবল লেবু ছাড়া আর কিছু দেওয়ার ছিল না বলেই মমতাদি তাকে বাড়ি ফিরে যাওয়ার কথা বলেন।

প্রশ্ন-১৩ 'মমতাদি' গল্পে মমতাদির মধ্যে কীভাবে মানবিকতা প্রকাশ পেয়েছে? 
উত্তর: মমতাদি গল্পে ছোট ছেলেটি ও তার পরিবারকে আপন করে নেওয়ার মধ্য দিয়ে মমতাদির মানবিকতা প্রকাশ পেয়েছে। রাঁধুনী হিসেবে কাজে যোগ দিলেও শুধু কাজের মধ্যে মমতাদি সীমাবদ্ধ থাকেনি। তার স্নেহ পেয়েছে বাড়ির ছোট ছেলেটি। এছাড়া বাড়ির অন্যদের কাছ থেকে ভালোবাসা পেয়ে সেও তাদের প্রতি দায়বদ্ধ হয়ে ওঠে। ফলে স্বামী চাকরি পেলেও সে কাজ ছাড়তে রাজি হয়নি। আর এভাবেই মমতাদির ভেতরে মানবিকতাবোধের প্রকাশ ঘটেছে। 

প্রশ্ন- ২ লেখক মমতাদিকে 'ছায়াময়ী মানবী' বলেছেন কেন? 

উত্তর: মমতাদির নিস্তব্ধতা ও অন্তর্মুখী আচরণ দেখে লেখক তার সম্পর্কে এ মন্তব্য করেছেন। সংসারের প্রয়োজনে পর্দা ঠেলে বাইরে কাজ করতে এলেও মমতার ব্যক্তিসত্তা একটুও লঘু হয়নি। গল্পে যে বাড়িতে সে কাজ করতে আসে সেখানে কারো সঙ্গে তার ব্যক্তিগত কোনো হৃদ্যতা গড়ে ওঠেনি। কিন্তু সমস্ত কাজগুকে সে আপন করে নিয়েছিল। তার এ সম্পর্ক লেখকের কাছে ভীষণ অদ্ভুত আর রহস্যময় বলে মনে হয়েছিল; কারণ বাড়িতে কাজ করা অবস্থায় তার অবস্থান কেউ জানতেই পারেনি। এ কারণে লেখক মমতাদিকে ছায়াময়ী মানবী বলেছেন। 


বাংলা ১ম পত্র অনুধাবনমুলক প্রশ্ন উত্তর

Post a Comment

Previous Post Next Post